নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু। বান্দরবানের লামায় (বুধবার ২লা মার্চ ২২ইং ) লামা উপজেলা হলরুমে নির্বাহী অফিসার মোস্তফা জাবেদ কায়সার এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল।
বক্তারা বঙ্গবন্ধুর ১৯৪৭, ৪৮, ৫০’র কথা, এর পর ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২, ৬৬’র বাঙ্গালীর স্বাধীনতার সনদ-৬ দফা, এর পর ৬৯, ৭০, সর্বশেষ ১৯৭১ এর ৭ মার্চ পরবর্তী বাঙ্গালীর রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের পটভূমি তুলে ধরেন বক্তারা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চুড়ান্ত ধাপ মুক্তিযুদ্ধ। আর এই মুক্তিযুদ্ধ কি? কেনইবা লাল সবুজের এমন সুন্দর দেশটা স্বাধীন করতে আমাদের এমন কঠিন ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রযোজন হয়েছিল তার বর্ণনা, মুক্তিযুদ্ধের গল্পকথা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদানের জন্য বাঙালির জাতির পিতার আসনে তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
ধাপে ধাপে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের শীর্ষ আসনে চলে আসেন।হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সকলের অগ্রভাগে থেকে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছেন।
তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের সোনার ফসল এই স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রথম মুসলিম লীগের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির পথে যাত্রা। সেই থেকে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন পূর্ব বাংলার অসাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ।
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে তিনি মুসলিম লীগ থেকে ক্রমশঃ সরে গিয়ে তরুনদের সংগঠিত করতে থাকেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেয়ার কারণেই তার জেল জীবন শুরু।
জেলখানায় বন্দী থেকেও তিনি ভাষার দাবিকে উস্কে দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান সকলের উপরে। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখন্ডের স্বপ্ন এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে লালন করে আসছিল। কিন্তু এর বাস্তব রুপ লাভ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই।
ছাত্র জীবন থেকেই প্রতিবাদী এ প্রাণপুরুষ প্রতিটি আন্দোলনে সবার আগে। তার প্রতিটি কথাতেই ছিল প্রতিবাদী সূর। পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা সব সময় বঙ্গবন্ধুর ভয়ে তটস্ত থাকত। সে কারণে তারা বিভিন্ন অজুহাতে তাকে জেলে বন্দী রেখেই স্বস্তি পেত।
সর্ব প্রথম জেল থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগকে তিনি পৌছে দিয়েছেন রাজনীতির শীর্ষ দুয়ারে।
১৯৬৬ সালে সর্ব প্রথম ৬ দফা কর্মসূচীর মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছেন। এই ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন ঠেকাতে পশ্চিমা সামরিক শাসক আইয়ুব খান ‘ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়’ শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে প্রহসনের বিচার শুরু করে।
এদেশের মানুষের গণদাবির মুখে ঊনসত্তুরের গণআন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার পর শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু নামে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে পরিগনিত হন।
তার বজ্রকন্ঠে দেয়া ভাষন পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষনের মর্যাদা পেয়েছে।১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনী বর্বর হত্যাকান্ড শুরু করলে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার কিছুক্ষন পরেই পাকসেনারা তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায়।
এরপর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারে স্থানান্তর করে দীর্ঘ দশ মাস তাকে বন্দী করে রাখে। কিন্তু এদেশের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের নির্দেশনা মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য দেন লামা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী আতিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামিলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাস, বিআরডি অফিসার গোফাল কৃষ্ণ চক্রবর্তী, লামা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান, লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজিজুল নিজামী,সহ প্রমুখ।